আরবি মাসের ক্যালেন্ডার- ২০২৬
আরবি বা ইসলামী ক্যালেন্ডার (হিজরী ক্যালেন্ডার )হলো চাঁদ নির্ভর একটি
ক্যালেন্ডার। এটি বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,কারণ এর
ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হয় রোজা,ঈদ,হ্জ, আশুরা , লাইলাতুল কদরসহ নানা ধর্মীয়
আচার অনুষ্ঠান। গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে এর পার্থক্য হল-আরবি
ক্যালেন্ডার মাস ২৯ বা ৩০ দিনে হয় এবং বছরে ৩৫৪ দিন থাকে । তাই প্রতিবছর ইসলামী
তারিখগুলো গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় ১০ -১১ দিন আগে চলে আসে।
২০২৬ সালের আরবি মাসের এ চক্র অনুযায়ী ধর্মীয় উৎসবগুলো পালিত হবে । নিচে
২০২৬ সালের আরবি মাস ত্তিভিক ক্যালেন্ডার ও তার গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
পেজ সূচিপত্রে আরবী মাসের ক্যালেন্ডার -
আরবি মাসসমূহের তালিকা
আরবি বা হিজরী ক্যালেন্ডার মোট ১২টি মাছ রয়েছে
(১)মহরম
(২)সফর
(৩)রবিউল আউয়াল
(৪)রবিউস সানি
(৫)জামাদিউল আউয়াল
(৬)জামাদিউস সানি
(৭)রজব
(৮)শাবান
(৯)রমজান
(১০) সাওয়াল
(১১)জিলকদ
(১২)জিলহজ
প্রতিটি মাসের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য
আরবি এবং ইংরেজি মাসের ক্যালেন্ডার এর ২০২৬ সাল
(উল্লেখ্যঃ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তারিখ একদিন হেরফের হতে পারে| নিচে আনুমানিক
গ্রেগারিয়ান ক্যালেন্ডার এর অনুযায়ী তারিখ দেওয়া হলো।
🌛মহরম ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ১৭ জুন ২০২৬ - ২৬ শে জুলাই ২০২৬
মহরম ১৪৪৭ হিজরী হল ইসলামী বর্ষপঞ্জির, প্রথম মাস মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ মাস হিসেবে গণ্য। এটি নতুন হিজরী বছরের সূচনা ঘোষণা করে ঘোষণা করে, এবং আত্মশুদ্ধি সংযম ও আল্লাহর নিকট ক্ষমাপার্থনার সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। মহরম মাসে যুদ্ধ - বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই একে "আসহুরুল হুকুম" বা পবিত্র মাস বলা হয়। এ মাসে দশম দিনে, অর্থাৎ আশুরা, ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনে হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লাম আল্লাহুর আদেশে ফেরাউন থেকে মুক্তি পান মুক্তি পান এবং পরবর্তীতে কারবালার প্রান্তরে মহান ঈমান হোসাইন রাদিয়াল্লাহু শাহাদাত বরণ করেন। মুসলমানরা এই দিনটি শো ক শো ক শোক আত্মসমালোচনা ও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে পালন করে। মহরম ১৪৪৭ আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় - ন্যায়ের এর পক্ষে অটল থাকা, সত্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়া একজন মুসলমানের জীবন দর্শনের অংশ।
🌛সফর ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ ১৭ জুলাই- ১৫ আগস্ট ২০২৬
সফর১৪৪৭ হিজরী হল ইসলামী চন্দ্র বর্ষপঞ্জির দ্বিতীয় মাস। এ মাসটি ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যদিও অনেকের মধ্যে সফর মাস সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। বাস্তবে ইসলামী শরীয়তে সফর মাসকে অশুভ বা দুর্ভাগ্যের মাস মনে করার কোন ভিত্তি নেই। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাবে বলেছেন- সফরে কোন অমঙ্গল নেই সহীহ মুসলিম। তাই মুসলমানদের উচিত কুসংস্কার ত্যাগ করে এই মাসকে অন্য মাস গুলোর মতই আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ কামনায় অতিবাহিত করা। সফল মাস আমাদের শেখায়, জীবন ও মৃত্যু, সুখ ও দুঃখ সবকিছু আল্লাহর হাতে নির্ধারিত। এই মাসে ইবাদত, দোয়া, নামাজ ও দুরুদ শরীফের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এর চেষ্টা করা উচিত। সফর .১৪৪৭ হিজরী আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেই- কুসংস্কারের বদলে, ঈমান ধৈর্য ও বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা রাখাই একজন মুমিনের প্রকৃত গুণ।
রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ১৬ই আগস্ট ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৬।
গুরুত্ঃ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ ও
ইন্তেকাল করেন মুসলিমরা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম উদযাপন করেন।
রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ১৪ ই সেপ্টেম্বর ১২ অক্টোবর ২০২৬।
গুরুত্বঃ ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন খলিফার শাসনকালীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ মাসে
সংঘটিত হয়েছিল।
জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ ১৩ই অক্টোবর নভেম্বর ২০২২৬।
গুরুত্বঃ এই মাসে বহু ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে মুসলিম ইতিহাসে রয়েছে বিশেষ
তাৎপর্য।
জামাদি উস সানি ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ ১২ই নভেম্বর -১০ ডিসেম্বর।
গুরুত্বঃ হযরত ফাতেমা রাজিয়াল্লাহু এ মাসে ইন্তেকাল করেন বলে অনেক ঐতিহাসিক
বর্ণনা রয়েছে।
রজব ১৪৪৭ হিজরি
সম্ভাব্য তারিখঃ ১১ ডিসেম্বর -২০২৬ জানুয়ারি২০২৭।
গুরুত্বঃ রজব মাসে মিরাজের ঘটনা ঘটে এ মাস কে ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে
গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়
সাবান ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ ১০ই জানুয়ারি ৮ ই ফেব্রুয়ারি ২০২৭।
গুরুত্বঃ শাবান মাসে লাইলাতুল বরাত পালিত হয় এ মাস কে রমজানের প্রস্তুতি
মাস বলা হয়।
রমজান ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভবতারিকঃ ৯ই ফেব্রুয়ারি -১০ই মার্চ ২০২৭
গুরুত্বঃ রমজান মাসে মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বরকতময় মাস। এ মাসে সিয়াম সাধনা বা
রোজা ফরজ করা হয়েছে,২৭ শে রমজান লাইলাতুল কদর পালিত হয়।
সাওয়াল ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ ১১ই মার্চ -৯ই এপ্রিল ২০২৭।
গুরুত্বঃ শাওয়াল মাসের গুরুত্ব এই মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর
পালিত হয়।
জিলকদ ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ১০ এপ্রিল- ৯ই মে ২০২৭।
গুরুত্বঃ জিলকদ মাসে হজের প্রস্তুতির মাস হিসেবে পরিচালিত হয়।
জিলহজ্ব ১৪৪৭ হিজরী
সম্ভাব্য তারিখঃ ১০ই মে- ৮ই জুন ২০২৭।
গুরুত্বঃ এ মাসে হজ অনুষ্ঠিত হয ৯ জিলহজ্জ আরাফাতের ময়দানে। ১০ শে জিলহজ্জ
ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয়।
আরবি ক্যালেন্ডার এর বৈশিষ্ট্য
এটি সম্পূর্ণ চন্দ্র নির্ভর।
বছরে ১২ মাস থাকে তবে মোট দিন হয় ৩৫৪।
ইসলামি দায়িত্ব পালন যেমন-হজ ,রোজা,কুরবানী সময়সূচির সময় ক্যালেন্ডারের
উপর নির্ভরশীল।
গ্রেগারিয়ান ক্যালেন্ডার সঙ্গে প্রতিবছর ১০ থেকে ১১ দিনের পার্থক্য
দেখা যায়।
মুসলিম জীবনে আরবি মাসের গুরুত্ব
ধর্মীয় পালনঃ ইসলামের সব ফরজ ইবাদত আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে
নির্ধারিত।
ঐতিহাসিক স্মৃতিঃ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বড় ঘটনা
নির্দিষ্ট মাসে সংঘটিত হয়।
সামাজিক সংযোগঃ ঈদ কোরবানি মিলাদ আশুরা এসবের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে আনন্দ
একের বন্ধন সৃষ্টি হয়।
আধ্যাত্মিক শিক্ষাঃ মাসগুলো মানুষকে ধৈর্য ত্যাগ আত্ম সংযম ও আল্লাহর
প্রতি নিবেদিত হতে শিক্ষা দেই।
২০২৬ সালে আরবি মাসের ক্যালেন্ডার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেই যে মুসলিমদের
জীবনযাত্রা কতটা ইসলামী ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিটি মাসে রয়েছে বিশেষ
তাৎপর্য এবং শিক্ষা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে, তবে
ক্যালেন্ডার অনুসারে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া আমাদের জন্য সুবিধা জনক। তাই
২০২৬ সালের জৈন মুসলিম বিশ্বকে আরবি মাস ভিত্তিক সময়সূচী জানানো অত্যন্ত
জরুরী।
তাই ২০২৬ সালের ইসলামিক ক্যালেন্ডার এর জানার মাধ্যমে রোজা,হজ, ঈদসহ সকল ধর্মীয়
অনুষ্ঠান সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হবে


.webp)
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url