স্মার্টফোনে ঘাড় ও চোখের সমস্যার প্রতিকারের সহজ উপায়

 

 স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ফলে ঘাড় ও চোখের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আধুনিক জীবনে স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা এবং এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি।  


স্মার্টফোনে ঘাড় ও চোখের সমস্যার প্রতিকারের সহজ উপায়

এই নির্দেশিকার উদ্দেশ্য; স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সমস্যার সমাধানের উপায় জানানো।

পেজ সূচিপত্র আমরা স্মার্টফোনের ঘাড় ও চোখের সমস্যার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা



স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব; ঘাড় ও চোখের উপর এর প্রভাব সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা


স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অভিছেদ্ধ অংশে পরিণত হয়েছে, কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে চোখ ও ঘাড়ের উপর এর প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ক্লান্তি, শুষ্কতা, ঝাপসা দেখা, এমন কিছু চোখের জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।নীল আলো রেটিনার কোষের ক্ষতি করে এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে, কারণ এটি মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করে। অন্যদিকে, ঘাড়ের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় সাধারণত আমরা মাথা নিচু করে থাকি, যা ঘাড়ের পেশীতে অতিরিক্ত চাপ ফেলে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে "টেক্সট নেক" বলা হয়, যা ক্রমে ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা, পেশীর টান এমনকি মেরুদন্ডের বিকৃতি ঘটাতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ফোন ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট বিরতি নেওয়া, চোখ বিশ্রাম, দেওয়া এবং সঠিক ভঙ্গিতে বসা অত্যন্ত জরুরী। স্মার্টফোনের সঠিক ব্যবহার না জানলে এটি আমাদের চোখ ও ঘাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য নিরব শত্রু হয়ে উঠতে পারে।


স্মার্টফোন ব্যবহার কারণে ঘাড়ের ব্যথা কমাতে কিছু টিপস নিচে দেওয়া হল

স্মার্টফোন ব্যবহার কারণে ঘাড়ের ব্যথা কমাতে




ব্যায়াম

ঘাড় ঘোরানো; ধীরে ধীরে আপনার ঘাড় সামনে, পিছনে এবং পাশে ঘোরান। প্রতিটি দিকে১০ বার  ঘোরান।

কাঁধ ঘোরানো; আপনার কাঁধ সামনে এবং পিছনে ১০ বার ঘোরান। 

ঘাড় প্রসারিত করা; আপনার ডান হাত দিয়ে আপনার মাথার বাম দিকটি ধরুন এবং আপনার ঘাড়টি ডান কাঁধের দিকে আলতো করে টানুন। অন্য পাশে পুনরাবৃত্তি করুন। প্রতিটি দিক ২০ সেকেন্ড ধরে  রাখুন। 

সঠিক ভঙ্গি

সোজা হয়ে বসুন বা দাড়ান; আপনার মেরুদন্ড সোজা রাখুন এবং আপনার কাঁধ শিথিল রাখুন।

স্ক্রিনের উচ্চতা; ফোনটি চোখের উচ্চতায় ধরে রাখুন। এর জন্য আপনি স্ট্যান্ড বা বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।

বিরতি; প্রতি ৩০ মিনিট পরপর কয়েক মিনিটের জন্য বিরতি দিন। এই সময়টুকুতে হাঁটাহাঁটি করুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।

অন্যান্য টিপস;

গরম বা ঠান্ডা সেঁক; ব্যথার জায়গায় গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিন।\

মালিশ; ঘাড়ের পেশী মালিশ করলে ব্যথা কমতে পারে।

ব্যথা নাশক ওষুধ; প্রয়োজনে ব্যথা নাশক শুক ওষুধ খেতে পারেন।

চিকিৎসকের পরামর্শ; যদি ব্যথা  তীব্র হয় বা কয়েক দিনের মধ্যে না কমে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মনে রাখবেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় নিয়মিত বিরতি নেওয়া এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্মার্টফোন ব্যবহারে এর কারণে চোখের সমস্যার প্রতিকার জন্য নিচে কিছু সহজ উপায় বর্ণনা করা হলো 

স্মার্টফোন ব্যবহারে এর কারণে চোখের সমস্যার প্রতিকার




২০-২০-২০ নিয়ম; প্রতি ২০ মিনিট পর পর, ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকান। এটি চোখের পেশী শিথিল করে এবং চোখের চাপ কমায়। 

চোখের পলক ফেলা; ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন। এটি চোখে আদ্র রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্কতা কমায়।

স্কিন সামঞ্জস্য; স্কিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিন এবংফন্টের আকার বাড়ান। এটি চোখের উপর চাপ কমায়  এবং দেখতে সহজ করে তোলে। 

চোখের ব্যায়াম; চোখে আরাম দিতে কিছু সহজ ব্যায়াম করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার চোখ কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করুন, তারপর খুলুন এবং বিভিন্ন দিকে তাকান।

অন্যান্য টিপস;

  • পর্যাপ্ত আলোতে ফোন ব্যবহার করুন।
  • রাতে নীল আলো ফিল্টার ব্যবহার করুন।
  • চোখের শুষ্কতা কমাতে আই ড্রপ  ব্যবহার কর।
  • নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করুন।

মনে রাখবেন স্মার্ট ফোন ব্যবহারের সময় নিয়মিত বিরতি নেওয়া এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রা কে সহজ উন্নত করেছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা দ্রুত যোগাযোগ করতে পারি, জ্ঞান অর্জন করতে পারি এবং বিনোদন উপভোগ করতে পারি। চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনকে আরো সহজ করেছে। তবে,  প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই,  প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরী। 


স্মার্ট ফোন ব্যবহারের কিছু সুফল নিচে দেওয়া হলো;

যোগাযোগ; স্মার্টফোনের মাধ্যমে খুব সহজে এবং দ্রুত যোগাযোগ করা যায়।

তথ্যপ্রাপ্তি; যে কোন বিষয়ে তথ্য খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

শিক্ষা; অনলাইন ক্লাস এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।

বিনোদন; গান শোনা, সিনেমা দেখা এবং গেম খেলার মাধ্যমে বিনোদন পাওয়া যায়।

স্মার্ট ফোন ব্যবহারের কিছু কুফল নিচে দেওয়া হল;

শারীরিক সমস্যা; দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহারের ফলে চোখ ও ঘাড়ের ব্যথা, মাথাব্যথা এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

মানসিক সমস্যা; অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষন্নতা বাড়ে।

সামাজিক সমস্যা; অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হতে পারে।

উপসংহার

স্মার্টফোন ব্যবহারে ঘাড় ও চোখের সমস্যা আজকাল একটি সাধারণ স্বাস্থ্য যোগী হয়ে উঠেছে। আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহারের বিকল্প নেই, তবে এর অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের দেহে নানান নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঘাড় ব্যথা, চোখে জ্বালা, ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা - এসব সমস্যার প্রধান কারণ হলো ফোনের দিকে নিচু হয়ে তাকিয়ে থাকা এবং অপ্রয়োজনীয় স্ক্রল করা। এসব সমস্যা প্রতিকারের প্রথম ও সহজ উপায় হল সচেতনতা বৃদ্ধি। স্মার্টফোন ব্যবহার করার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা জরুরী; ফোন চোখের সমান উচ্চতায় ধরে ব্যবহার করলে ঘাড়ের চাপ কমে। প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পর একসাথে দুই মিনিটের জন্য বিরতি নিয়ে চোখ ওভার বিশ্রাম দেওয়া উচিত। চোখে শুষ্কতা রোধে বেশি করে পলক ফেলা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতের অন্ধকারে ফোন ব্যবহার না করে "নাইট মোড "বা "ব্ল  লাইট ফিল্টার" চালু করা উচিত। ঘাড়ের ব্যথা প্রতিরোধে  প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম, বিশেষ করে ঘাড় ও কাঁধের   স্ট্রেচিং অনুশীলন, খুবই কার্যকর। এছাড়া স্মার্টফোন অপ্রয়োজনীয় সময় কাটানোর বদলে বই পড়া, হাটা বা অন্য কোন শারীরিক ক্রিয়ায় যুক্ত হওয়া উচিত। সর্বোপরি, সচেতন ব্যবহারই হতে পারে স্মার্টফোনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজকে সুরক্ষিত রাখার মূল চাবিকাঠি। প্রযুক্তি কে জীবনের সহায়ক করে তোলা উচিত, বোঝা নয়, সঠিক ব্যবহার ও উৎপাদনশীল জীবনে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url