বাংলাদেশে অনলাইন অথবা সরাসরি পাসপোর্ট করার নিয়ম

 

বর্তমান যুগে পাসপোর্ট কেবল বিদেশ ভ্রমণের জন্যই নয়, বরং নাগরিক পরিচয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান নথি। বাংলাদেশে এখন পাসপোর্ট করা অনেক সহজ হয়েছে - কারণ সরকার চালু করেছে বাংলাদেশ অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম। আগে যেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দিন কাটাতে হতো, এখন ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন, ফি, প্রদান এমনকি এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়।


বাংলাদেশ অনলাইন অথবা সরাসরি পাসপোর্ট করার নিয়ম


এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত জানবো কিভাবে বাংলাদেশে অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুসরণ করে আপনি দ্রুত ও ঝামেলা মুক্ত ভাবে নতুন পাসপোর্ট করতে পারবেন, অথবা পুরানো পাসপোর্ট। নবায়ন করতে পারবেন। একই সঙ্গে আমরা সরাসরি আবেদন (অনলাইন ) প্রক্রিয়াটিও তুলে ধরবো।

পেজ সূচিপত্রে আমরা জানবো কিভাবে বাংলাদেশে অনলাইন অথবা সরাসরি পাসপোর্ট করা যায়

আরও পড়ুন 

পাসপোর্টের ধরন

বাংলাদেশের বর্তমানে  তিন ধরনের পাসপোর্ট প্রচলিত;

1. Machine Readable Passport (MRP) - পুরনো ধরনের, এখন অনেকাংশে বাতিল।

2. e -Passport ( ই -পাসপোর্ট) - আধুনিক, নিরাপদ ও ইলেকট্রনিক চিফ যুক্ত পাসপোর্ট।

3. Diplomatic / Official Passport - সরকারি ও কূটনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য। 


বর্তমানে সকল সাধারন নাগরিককেই ই -পাসপোর্ট করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশে অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম মূলত এই ই পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার জন্যই প্রযোজ্য। 


কেন ই - পাসপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ

  • এতে একটি ইলেকট্রনিক চিপ থাকে যেখানে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
  • আন্তর্জাতিক ভ্রমণ অধিক গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ।
  • জালিয়াতি বা কপি করা প্রায় অসম্ভব।
  • বিমানবন্দরের দ্রুত ইমিগ্রেশন সুবি...
  • ৫বছর ও ১০ বছরের জন্য ইস্যু করা যায়।

সরকারের লক্ষ্য হলো .২০২৬ সালের মধ্যে সকল নাগরিককে ই - পাসপোর্ট আওতায় আনা। তাই এখন থেকেই সবাইকে বাংলাদেশে অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া উচিত।

অনলাইন পাসপোর্ট এর জন্য যা যা প্রয়োজন

বাংলাদেশ অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুসারে আবেদন করার আগে আপনার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে;

  • জাতীয় পরিচয় পত্র (NID)- অবশ্যই সক্রিয় হতে হবে
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ - যাদের NID নেই ( ১৮ বছরের নিচে)
  • স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা প্রমাণপত্র
  • পিতা-মাতা বা স্বামী/ স্ত্রীর NID (যদি প্রয়োজন হয়)
  • পেশাগত তথ্য বা চাকরি ID ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • একটি কার্যকর ইমেইল ও মোবাইল নাম্বার
  • পাসপোর্ট ফি  e - Paymentবা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে)

বাংলাদেশে অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম


এখন আসুন আমরা দেখি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি কেমন👇

১. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ

 👉https:www.epassport.gov.bd এ যান।
এটি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের অফিসিয়াল সাইট।

২. নতুন আবেদন নির্বাচন

হোমপেজে "Apply 0nline for e- passport ক্লিক করুন।
তারপর  "New Application"নির্বাচন করুন। 

৩. আপনার Thana / Passport Office নির্বাচন

আপনার স্থায়ী ঠিকানার অন্তর্ভুক্ত থানার নাম নির্বাচন করুন।

এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট Passport Office সিলেক্ট হয়ে যাবে।

৪. অনলাইন ফর্ম পুরুন

ফর্মে নিচের তথ্য দিতে হবে;

  • ব্যক্তিগত তথ্য, (নাম জন্ম, তারিখ পিতা - মাতার নাম)
  • যোগাযোগের তথ্য
  • স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
  • পেশা, , শিক্ষাগত যোগ্যতা, বৈবাহিক অবস্থা
  • পূর্বের পাসপোর্ট তথ্য (যদি থাকে)
  • ফর্ম  পূরণ শেষে  "Save and Continue"ক্লিক করুন।
৫. ফি পরিশোধ

বাংলাদেশ অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুযায়ী আপনি নিচের যেকোন মাধ্যমে ফ্রি পরিশোধ করতে পারেনঃ
  • অনলাইন ব্যাংকিং (  Rocket, bkasah, Nagad, Upay ইত্যাদি)
  • SonaliBank বাAgrani Bank কাউন্টারে নগদ জমা
  • E- Payment গেটওয়ে
ফ্রি নির্ধারণ (২০২৫ অনুযায়ী);

মেয়াদ পৃষ্ঠা সংখ্যা ডেলিভারি টাইপ ফি (টাকা)
৫ বছর ৪৮ পৃষ্ঠা সাধারন ৪,০২৫/-
৫বছর ৪৮ পৃষ্ঠা জরুরি ৬,৩২৫/-
১০ বছর ৬৪ পৃষ্ঠা সাধারন ৫,৭৫০/-
১০ বছর ৬৪ পৃষ্ঠা জরুরি ৮,০৫০/-

অ্য়াপয়েন্টম্যান্ট নেওয়া 


ফী  জমা দেওয়ার পর আপনি একটি "Application ID" পাবেন।

এই আইডি দিয়ে লগইন করে Appointment Date নির্বাচ নির্বাচন করুন।
এই তারিখে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি ও বায়োমেট্রিক দিতে হবে। 

বায়োমেট্রিক ও ছবি তোলা অ্যাপোয়েন্টমেন্ট এর দিনে নিচের জিনিসগুলোর সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে;

  • প্রিন্ট করা আবেদন ফর্ম 
  • পেমেন্ট রশিদ
  • জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্মসনদ
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সেখানে ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ ও স্বাক্ষর দেওয়া সম্পন্ন হবে।

আবেদন যাচাই ও পাসপোর্ট ডেলিভারি

যখন আপনার সমস্ত তথ্য যাচাই শেষ হবে, তখন বা ইমেইল দিয়ে জানানো হবে কখন পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
সাধারণত - 
  • সাধারণ ডেলিভারি; ২১ কার্যদিবস
  • জরুরি ডেলিভারি; ৭ কার্যদিবস

 একটি প্রক্রিয়াটি মূলত বাংলাদেশে অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুসারে সম্পূর্ণ অনলাইন আবেদন পদ্ধতি।


সরাসরি  (অফলাইন )পাসপোর্ট করার নিয়ম


যদি কেউ অনলাইনে করতে না চান, তাহলে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন ফর্ম  পূরণ করে জমা দিতে পারেন।

প্রক্রিয়া
  1. পাসপোর্ট অফিস থেকে ফর্ম সংগ্রহ করুন
  2. কলমে পূরণ করুন ও ছবি সংযুক্ত করুন
  3. নির্দিষ্ট ব্যাংকের ফি জমা দিন
  4. ফর্ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অফিসে জমা দিন
  5. ছবি ও বায়োমেট্রিক দিন

এই প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক ধীরগতী এবং অনলাইন পদ্ধতির মত সুবিধা জনক নয়। তবে যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত, তাদের জন্য এটি কার্যকর।

পাসপোর্টে সাধারণ ভুল ও তা এড়ানোর উপায়


বাংলাদেশ অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুযায়ী অনেকেই ছোট ভুলের কারণে আবেদন বাতিল হয়ে যায়। নিচের দিকগুলো খেয়াল রাখলে সমস্যা হবে না👇

  1. নাম ,  জন্মতারিখ ও NID এর তথ্য অবশ্যই মিল থাকতে হবে
  2. ইমেইল ঠিকানা সঠিক দিন, কারণ এখানেই কনফার্মেশন পাঠানো হয়।
  3. কি পরিষদের পর অবশ্যই। রশিদ সংরক্ষণ করুন
  4. ভুল থানার নাম বা ঠিকানা দিলে ফাইল ট্রান্সফাররে দেরি হয়।

অনলাইনে আবেদন বাতিল হলে কি করবেন


যদি আবেদনটি ভুলের কারণে বাতিল হয়, তাহলে;
  • আপনার ইমেইল বা এসএমএসে  এর কারণটি জানানো হবে।
  • প্রয়োজনের নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।
  • আগে জমা দেওয়া ফি ফেরতযোগ্য  নয়, তাই সাবধানে তথ্য দিন।

অনলাইন পাসপোর্ট ট্রাক করার নিয়ম


আপনার আবেদন কোথায় আছে জানতে পারেন👉
https;//www.epassport.gov.bd/status
সেখানে আপনার Application ID এবং Date of Brith দিয়ে  "Check Status" চাপুন। 

এতে আপনি দেখতে পারবেন - 

  • আবেদন গ্রহণ হচ্ছে কি না
  • যাচাই চলছে কি না
  • পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়েছে কি না
  • বিতরণের তারিখ

এটিও বাংলাদেশের অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জন্য পাসপোর্ট করার নিয়ম


যারা বিদেশে থাকেন, তারা সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশনারের মাধ্যমে পাসপোর্টে আবেদন করতে পারেন।
অনলাইন ফর্ম একই থাকবে, তবে ডেলিভারি ঠিকানা হবে দূতাবাস।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস


  1. আবেদন করার আগে সব ডকুমেন্ট স্ক্যান করে রাখুন
  2. নিজের নামে ব্যাংক পেমেন্ট করুন, অন্য কারো নামে নয়।
  3. জরুরি দরকার না হলে সাধারন প্যাকেজে, আবেদন করুন এতে খরচ কমে।
  4. SMS নোটিফিকেশন ঠিকভাবে পেতে সব সময় মোবাইল চালু রাখুন।
  5. পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় মূল NID সঙ্গে রাখুন।
  6. বাংলাদেশেে অনলাইন পাসপোর্ট করার নিয়ম; সারসংক্ষেপ

ধাপ কাজের নাম মাধ্যম
1 অনলাইন ফর্ম পূরণ epassport.gov.bd
2 ফি পরিশোধ অনলাইন বা ব্যাংক
3 অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনলাইন
4 ছবি ও বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট অফিস
5 যাচাই ও ডেলিভারি SMS /অফিসে সংগ্র


উপসংহার


ডিজিটাল বাংলাদেশ অন্যতম সাফল্য হলো অন্যতম সাফল্য হল পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ অনলাইন করা। এখন ঘরে বসে কয়েক মিনিটে ফর্ম পূরণ থেকে শুরু করে ফিপরিশোধ ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়।সুতরাং যারা, বিদেশ ভ্রমণ, চাকুরী পড়াশোনা বা ভিসা প্রসেসের জন্য নতুন পাসপোর্ট করতে চান - তাদের জন্য বাংলাদেশ অনলাইন পাসপোর্ট করার। নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরী
সঠিকভাবে আবেদন করলে আপনি খুব সহজেই দ্রুত ও ঝামেলা মুক্ত ভাবে পাসপোর্ট পেতে পারেন।
প্রতারণা বা দালালের ঝামেলার না গিয়ে নিজের তথ্য নিজে পূরণ  করুন, তাহলে এটি হবে নিরাপদ ও নিশ্চিত একটি প্রক্রিয়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url